শ্রীশ্রী সনকাদি ঋষি

শ্রীশ্রী সনকাদি ঋষি

এই সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় গুরু হলেন আজন্ম পঞ্চবর্ষীয়, কৌপীনধারী, সর্বতত্ত্বজ্ঞানী ব্রহ্মার মানস পুত্র চতুষ্টয় সনক, সনন্দ, সনাতন ও সনৎকুমার। তাঁদের সম্বন্ধে শাস্ত্রে উল্লেখিত আছে –

অথ ধাতুশ্চ মনস আবির্ভূতাঃ কুমারকাঃ।

চত্বারঃ পঞ্চবর্ষীয়া জ্বলন্তো ব্রহ্মতেজসা।।

সনকশ্চ সনন্দশ্চ তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ।

সনৎকুমারো ভগবাংশ্চচতুর্থো জ্ঞানিনাং বরঃ।। (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্ম খন্ড, ৮।১১,১২)

অর্থাৎ – অতঃপর ধাতা ব্রহ্মার মন থেকে ব্রহ্ম তেজে প্রজ্বলিত পঞ্চবর্ষীয় চারজন কুমার আবির্ভূত হলেন. তাঁদের মধ্যে সনক (প্রথম), সনন্দ (দ্বিতীয়) সনাতন তৃতীয় এবং চতুর্থ ভগবান সনৎকুমার, যিনি জ্ঞানীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

জগৎ স্রষ্টা ব্রহ্মা সৃষ্টি কার্য প্রারম্ভ ও চালিত রাখার জন্য এই চারিজনকে সৃষ্টি করেছিলেন কিন্তু আজন্ম ব্রহ্মচারী সৃষ্টিকার্যে যোগদান করতে অসমর্থ হলেন। এই পুরাণে আরও উল্লেখিত আছে যে, স্বয়ং বিধাতা স্বীয় পুত্রগণকে সৃষ্টি বিস্তার করতে বলাতে তাঁরা নিজের অসমর্থতা পিতাকে জ্ঞাপন করে বললেন, “আমরা সৃষ্টি করতে পারব না”, এই বলে তপস্যা করতে প্রস্থান করলেন। তাঁরা পরমপিতা ব্রহ্মাকে মোক্ষ বিষয়ে প্রশ্ন করে বলেন, “হে প্রভো! গুণসমূহে চিত্ত আবিষ্ট হয় এবং চিত্ত গুণ সমূহে, অতএব বিষয় অতিক্রম করতে মুমুক্ষুগণের এই পরস্পর মিলিত গুণ ও চিত্তের সম্বন্ধ বিচ্ছেদ কি করে হবে ?”

অর্থাৎ – আমরা জানি যে বিষয়ের প্রতি অনুরাগ হওয়াতে চিত্ত এই ত্রিগুণাত্মক জগৎরূপী বিষয়ে আসক্ত হয় এবং চিত্তেও গুণসকল বাসনারূপে প্রবেশ করে। তার ফলে দেহধারী জীব সুখ-দুঃখ, শীত-উষ্ণ, জন্ম-মৃত্যু আদি দ্বন্দ্ব ভোগ করে সংসার প্রপঞ্চে আবদ্ধ হয়ে যায়। যহেতূ বিষয়সকল ও চিত্তের এই পারস্পরিক সংযোগই জীবের ভোগের কারণ, সুতরাং এই সম্বন্ধকে বিচ্ছিন্ন করাই মুক্তির লক্ষ্য। সেই জন্য সনকাদি ঋষিগণ পিতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এই সংসার সাগরকে অতিক্রম করার জন্য মুমুক্ষু ব্যক্তিগণ  কি করে বিষয়গুলো থেকে চিত্তের এই সম্বন্ধকে বিচ্ছেদকরতে পারেন ? কি করেই বা তাঁরা বিষয়গুলোকে অতিক্রম করে মুক্তি লাভ করতে পারেন ? পরমপিতা ব্রহ্মা তখন সৃষ্টিকার্যে ব্যস্ত হওয়াতে তাঁর চিত্ত রজোগুণে পরিপূর্ণ ছিল, কর্মে বিক্ষিপ্ত হওয়াতে একাগ্রতার অভাবে তিনি ধ্যানযোগে পুত্রগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে অসমর্থ হলেন। তখন ব্রহ্মা শ্রী হরির ধ্যান করলেন। তখন ভগবান শ্রী হংসাবতাররূপে ব্রহ্মার নিকট আবির্ভূত হলেন এবং সনকাদি কুমারগণকে মোক্ষপ্রদায়িনী ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করলেন। আমাদের দ্বিতীয় গুরু শ্রী সনকাদিঋষিগণই এই মর্ত্যলোকে ব্রহ্মবিদ্যার প্রথম প্রবর্তক।

CONTINUE READING
Share this post
Come2theweb