সন্ধ্যারতি স্তুতি

সন্ধ্যারতি স্তুতি

হে রামপুরুষোত্তম নরহরে নারায়ণ কেশব,
হে গোবিন্দ গরুড়ধ্বজ গুণনিধে দামোদর মাধব।

হে কৃষ্ণ কমলাপতে যদুপতে সীতাপতে শ্রীপতে,হে
বৈকুণ্ঠাধিপতে চরাচরপতে লক্ষ্মীপতে পাহি মাম্‌।।১।।

হে গোপালক হে কৃপাজলনিধে হে সিন্ধুকন্যাপতে,
হে কংসান্তক হে গজেন্দ্রকরুণ পাহি নো হে মাধব।

হে রামানুজ হে জগত্রয়গুরো হে পুণ্ডরীকাক্ষ মাম,
হে গোপীজননাথ পালয় পরং জানামি ন ত্বাং বিনা।।২।।

কস্তুরীতিলকং ললাটপটলে বক্ষঃস্থলে কৌস্তুভং,
নাসাগ্রে গজমৌক্তিকং করতলে বেণুং করে কঙ্কণম্।

সর্বাঙ্গে হরিচন্দনং সুললিতং কণ্ঠে চ মুক্তাবলিং,
গোপস্ত্রীপরিবেষ্টিত বিজয়তে গোপাল চূড়ামণিঃ ।।৩।।

আদৌ রামতপোবনাদিগমনং হত্বা মৃগকাঞ্চনং,
বৈদেহীহরণং জটায়ুমরণং সুগ্রীবসম্ভাষণম্।

বালীনিগ্রহণং সমুদ্রতরণং লঙ্কাপুরীদাহনং,
পশ্চাৎ রাবণকুম্ভকর্ণহননং এতৎ শ্রীরামায়ণম্।।৪।।

আদৌ দেবকীদেবগর্ভজননং গোপীগৃহে বৰ্দ্ধনং,
মায়াপূতনাজীবতাপহরণং গোবর্দ্ধনধারণম্।

কংসচ্ছেদনং কৌরবাদিহননং কুন্তীসুতপালনং,
এতৎ শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণকথিতং শ্রীকৃষ্ণলীলামৃতম্।।৫।।

পার্থায় প্রতিবোধিতাং ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ং,
ব্যাসেন গ্রথিতাং পুরাণমুনিনা মধ্যে মহাভারতে।

অদ্বৈতামৃতবর্ষিণীং ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনী
মম্বত্বামনুসন্দধামি ভগবদগীতে ভবদ্বেষিণীম।।৬।।

নমোস্তুতে ব্যাস বিশালবুদ্ধে ফুল্লারবিন্দায়তপত্রনেত্র
যেন ত্বয়া ভারত-তৈলপূর্ণ।

প্রজ্বালিতো জ্ঞানময়ঃ প্রদীপঃ।। ৭।।

চলো সখি তাঁহা যাইয়ে যাঁহা বসে ব্রজরাজ।
গোরস বেচত হরি মিলয়ে একপন্থ দুঁহুকাজ।।৮।।

ব্রজচৌরাশী ক্রোশমে চারিগ্রাম নিজধাম।
বৃন্দাবন আউর মধুপুরী বর্ষাণে নন্দগ্রাম।।৯।।

বৃন্দাবন সে বন নেহি নন্দগ্রাম সে গ্রাম।
বংশীবটসে বট নেহি শ্রীকৃষ্ণনাম সে নাম।।১০।।

এক ঘড়ি আধি ঘড়ি আধি মেঁ পুনি আধ্।
তুলসী সঙ্গত সাধুন্ কী হরে কোটি অপরাধ ।।১১।।

 

সন্ধ্যা আরতির অনুবাদ

অনুবাদঃ ১. হে রাম, হে পুরুষোত্তম, হে নরহরি, হে নারায়ণ, হে কেশব, হে গোবিন্দ, হে গরুড়ধ্বজ (গরুড় যাহার রথের ধ্বজা), হে সকল গুণের আধার, হে দামোদর, হে মাধব, হে কৃষ্ণ, হে কমলার ( লক্ষ্মীর) পতি, হে যদুপতি, হে সীতাপতি রামচন্দ্র, হে শ্ৰীর (লক্ষ্মীর ) পতি নারায়ণ, হে বৈকুণ্ঠের অধিপতি, হে চরাচর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পতি, হে লক্ষ্মীপতি – আমাকে রক্ষা কর।

( শ্রীবিল্বমঙ্গলকৃত শ্রীকৃষ্ণকর্ণামৃত স্তোত্র থেকে এই শ্লোকটি এবং এর পরের শ্লোকটি গৃহীত হয়েছে।

২.গোপালক=বিশ্বের রক্ষক। কৃপাজলনিধে=হে কৃপাসিন্ধু । সিন্ধুকন্যাপতে=সিন্ধু অর্থাৎ সাগরের কন্যার পতি। লক্ষ্মী সমুদ্রমন্থনে সাগর হইতে উত্থিতা বলিয়া তাঁকে সিন্ধুকন্যা বলা হইয়াছে। সুতরাং তাঁর পতি-বিষ্ণু। কংসান্তক=কংসের অন্তক অর্থাৎ বিনাশকারী শ্রীকৃষ্ণ। গজেন্দ্রকরুণাপারীণ =গজ-কুম্ভীরের সংগ্রামে ভক্ত গজরাজের প্রতি করুণাপরবশ হয়ে বিষ্ণু তাকে রক্ষা করেছিলেন ; গজেন্দ্রের প্রতি করুণা পরায়ণ হে বিষ্ণু। জগত্রয়গুরো=হে ত্রিজগতের গুরু । পুণ্ডরীকাক্ষ=কমললোচন বিষ্ণু। পালয় =রক্ষা কর, প্রতিপালন কর। পরং জানামি ন ত্বাং বিনা=তোমা ছাড়া অন্য কাউকেই জানি না-তোমারই শরণাগত। ]

হে গোপাল, হে কৃপাসাগর, হে লক্ষ্মীকান্ত, হে কংসনিমূদন, গজ-কুম্ভীরের যুদ্ধে হে গজেন্দ্রের প্রতি করুণার পারাবার, হে মাধব, হে রামানুজ, হে ত্রিভুবন গুরা, হে পুণ্ডরিকাক্ষ, হে গোপীজনবল্লভ, তুমি আমাকে রক্ষা কর; আমি তোমা বিনা অন্য কাহাকেও জানি না।

৩. তোমার ললাটে কস্তুরীর তিলক, বক্ষঃস্থলে কৌস্তুভমণি, নাসাগ্রে গজমুক্তা, করতলে বংশী, মনিবন্ধে কঙ্কণ ও সর্বাঙ্গে হরিচন্দন শোভিত রয়েছে। তোমার কণ্ঠে মুক্তাবলিশোভিত হার সুন্দরভাবে ধারণ করে আছ এবং গোপরমণীগণ তোমাকে বেষ্টন করে আছেন। হে গোপাল চূড়ামণি, তোমার জয় হউক।

( এই শ্লোকটিকে একশ্লোকী রামায়ণ বলে ; কারণ, একটিমাত্র শ্লোকে সমগ্র রামায়ণ কীর্তন করা হয়েছে।)

৪. প্রথমে রামের তপোবনাদিগমন, তৎপরে স্বর্ণমৃগহত্যা, সীতাহরণ, জটায়ুর মৃত্যু, সুগ্রীবের সঙ্গে মিত্রতা, বালীনিগ্রহ, সমুদ্রলঙ্ঘন ও লঙ্কাপুরীদাহন এবং অবশেষে রাবণ ও কুম্ভকর্ণের নিধন –এই সমস্তই শ্রীরামায়ণে কথিত হয়েছে।

(এই শ্লোকটিকে বলা হয় -একশ্লোকী শ্রীমদ্ভাগবত, কারণ এতে একটিমাত্র শ্লোকে সমগ্র শ্রীমদ্ভাগবতোক্ত শ্রীকৃষ্ণলীলা কীর্তিত হয়েছে।)

৫. প্রথমে দেবকীর গর্ভে জন্ম, গোপীগৃহে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া, মায়াবিনী পুতনা রাক্ষসীকে হত্যা করে জীবকুলের সন্তাপহরণ, গিরিগোবর্ধনধারণ, কংসের কুরুবংশনাশ ও কুন্তীপুত্রগণকে রক্ষা করা—এই সমস্তই শ্রীমদ্ভাগবত-পুরাণে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের অশেষ লীলামৃত কাহিনী।

৬. ( পার্থায় =অর্জুনকে। প্রতিবোধিতাং=লক্ষ্য ( উদ্দেশ্য ) করে সম্যক্‌প্রকারে বিজ্ঞাপিত। পুরাণমুনিনা=প্রাচীন মুনিদ্বারা। অদ্বৈতামৃত বর্ষিণীং=অদ্বৈততত্ত্বরূপসুধাবর্ষণকারী। অম্ব =হে মাতঃ। অনুসন্ধামি =বিশেষ বিচার পূর্বক মনে মনে চিন্তা করি । ভবদ্বেষিণীং=ভব অর্থাৎ পুনর্জন্মকে যে নাশ করে তাকে।

হে জননি ভগবদগীতে। প্রাচীন মহর্ষি বেদব্যাসকর্তৃক মহাভারতের মধ্যে গ্রথিত এবং স্বয়ং ভগবান্ নারায়ণকর্তৃক অর্জুনকে লক্ষ্য করিয়া সম্যক্ প্রকারে প্রকাশিত, পুনর্জন্মনাশিনী, অদ্বৈততরূপসুধাধারাবর্ষণকারী, অষ্টাদশ-অধ্যায়রূপিণী, হে ভগবতী গীতে, তোমাকে আমি মনে মনে বিশেষরূপে ধ্যান করিতেছি।

৭. (নমঃ অস্তু তে=তোমাকে নমস্কার । বিশালবুদ্ধে=হে মহামতে। ফুল্লারবিন্দায়তপত্ৰনেত্র=ফুল্ল+অরবিন্দ+আয়তপত্ৰনেত্র, ফুল্ল= প্রস্ফুটিত ; অরবিন্দ =পদ্ম ; আয়ত =বিস্তৃত, দীর্ঘ ; পত্ৰনেত্র=পাতার মত চক্ষু যার ; প্রস্ফুটিত-বিশালপদ্মপত্রের ন্যায় চক্ষুবিশিষ্ট। ভারত-তৈলপূর্ণঃ=ভারত অর্থাৎ মহাভারত রূপ তৈল দ্বারা পরিপূর্ণ। )।  প্রস্ফুটিত পদ্মপত্রের ন্যায় আয়তনেত্র, হে মহামতি ব্যাসদেব ! তুমি “মহাভারতের অপূর্ব বাণী রূপ তৈল পূর্ণ করে জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্বলিত করেছ—তোমায় নমস্কার ।

৮-১১. ( গোরস=দুগ্ধ । ঘড়ি=দণ্ড। আধি =আধ= অর্ধেক । ) (সখীরা শ্রীমতী রাধারাণীকে বলিতেছেন –) হে সখি ! ব্রজরাজ শ্রীকৃষ্ণ যেখানে আছেন, চল, সেখানে যাই। দুগ্ধ বিক্রী করতে করতে হরিকে পেয়ে যাব – এক পথে দুই কাজই হবে। চৌরাশী ক্রোশ-ব্যাপী ব্রজধামে তোমার নিজস্ব ধাম চারিটি – বৃন্দাবন, মধুপুরী (মথুরা), বর্ষাণা ও নন্দগ্রাম। বৃন্দাবনের মত বন নাই, নন্দগ্রামের মত গ্রাম নাই, বংশীবটের মত বট নাই আর শ্রীকৃষ্ণনামের মত নাম নাই। তুলসীদাসজী বলেন – মাত্র একদণ্ড, আধ দণ্ড, এমন কি আধ-দণ্ডেরও অর্ধেক সময় সাধুসঙ্গ করলে কোটি অপরাধ অবশ্যই নাশ হয়।

সীয়াবর রামচন্দ্রকী জয়, অযোধ্যা রামলাকী জয়, হনুমানগরুড়দেবকী জয়, উমাপতি মহাদেবকী জয়, রমাপতি রামচন্দ্রকী জয়, বৃন্দাবন কৃষ্ণচন্দ্রকী জয়, ব্রজেশ্বরী রাধারানীকী জয়, বলো ভাই সব সন্তন অউর ভক্ত কী জয়, আপনা আপনি গুরুগোবিন্দকী জয়, সন্ধ্যারতি কী জয়, জয় জয় শ্রীরাধেশ্যাম।।

সন্ধ্যাস্তুতির পর কিছু সময় – ‘জয় রাধেশ্যাম, রাধেশ্যাম, রাধেশ্যাম জয় শ্যামাশ্যাম; জয় সীতারাম, সীতারাম, সীতারাম জয় সীয়াবররাম, জয় রাধেশ্যাম —” ধ্বনি সহকারে কীৰ্ত্তন করিতে হয়, তৎপর জয়ধ্বনি দিতে হয়।

CONTINUE READING
Share this post
Come2theweb